ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি তৈলাক্ত ত্বক হয়, তাহলে বিশেষভাবে সতর্ক হতে হয়, কারণ অতিরিক্ত তেল ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস এবং রুক্ষতা তৈরি করতে পারে। এ ধরনের ত্বকের জন্য সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ হলো একটি কার্যকর ফেসওয়াশ বেছে নেওয়া, যা অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে এবং ত্বককে সতেজ রাখবে।
তৈলাক্ত ত্বকে সেবাসিয়াস গ্রন্থি অতিরিক্ত সেবাম (তেল) উৎপন্ন করে। ফলে মুখে সবসময় চকচকে ভাব থাকে এবং ধুলাবালি, জীবাণু সহজে আটকে যায়। এর ফলে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস-হোয়াইটহেডস, Enlarged pores, স্কিন এ ইনফেকশন দেখা দেয়।
এসব সমস্যা রোধে দরকার এমন ফেসওয়াশ, যা ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে ত্বককে পরিষ্কার রাখবে, আবার অতিরিক্ত শুষ্কতাও তৈরি করবে না।
তৈলাক্ত ত্বক কী এবং কেন তা আলাদা যত্নের দাবি রাখে?
তৈলাক্ত ত্বকের মূল বৈশিষ্ট্য হলো সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ। সাধারণত কপাল, নাক ও চিবুক (T-zone) তেলের আধিক্যে এই এরিয়াগুলো সবসময় চকচকে থাকে। অনেক সময় অতিরিক্ত তেল জমে রোমকূপ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে দেখা দেয় ব্রণ ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যা।
শুধু সমস্যা নয়, তৈলাক্ত ত্বকের বড় সুবিধা হলো, এই ত্বকে বয়সের ছাপ তুলনামূলক ধীরে পড়ে। তবে সঠিক পরিচর্যার অভাবে এই ত্বক সহজেই নোংরা হয়ে যায় এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে।
ফেসওয়াশে কী উপাদান থাকা উচিত?
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত ফেসওয়াশ বেছে নেওয়ার সময় নিম্নলিখিত উপাদানগুলো থাকা দরকার:
১. স্যালিসাইলিক অ্যাসিড (Salicylic Acid)
উপাদানটি ত্বকের গভীর থেকে তেল ময়লা পরিষ্কার করে এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের ডেড সেল অপসারণ করে স্কিনকে ফ্রেশ রাখে।
২. টি-ট্রি অয়েল (Tea Tree Oil)
টি ট্রি অয়েল একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক, যা ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করে এবং ত্বকে আরাম দেয়।
৩. নিয়াসিনামাইড (Niacinamide)
নিয়াসিনামাইড ত্বকের সেবাম প্রোডাকশন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। পাশাপাশি এটি দাগ-ছোপ কমায়, ত্বককে হাইড্রটেড রাখতে সহায়তা করে।
৪. চারকোল বা ক্লে (Charcoal/Clay)
এই উপাদানগুলো অতিরিক্ত তেল শুষে নেয় এবং ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
তৈলাক্ত ত্বক এবং সংবেদনশীল (sensitive) ত্বক:
এই ধরনের ত্বকে অতিরিক্ত ক্ষারযুক্ত কেমিক্যাল বা ঘন ফোমিং ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত নয়। বরং অ্যালোভেরা, ক্যামোমাইল, গ্রিন টি বা জিংক অক্সাইড জাতীয় মাইল্ড উপাদানযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ফেসওয়াশের ধরণ:
১. জেল বেসড ফেসওয়াশ:
হালকা ও দ্রুত পরিষ্কার করে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আদর্শ।
২. ফোম বেসড ফেসওয়াশ:
ত্বকে আরামদায়ক ফেনা তৈরি করে, গভীর থেকে পরিষ্কার করে।
৩. পাউডার ফেসওয়াশ:
প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি, তেল শোষণে কার্যকর।
ব্যবহারের সঠিক নিয়ম :
ফেসওয়াশ সঠিকভাবে ব্যবহার করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ধাপে ধাপে নিয়ম দেওয়া হলো:
- প্রথমে ঠান্ডা বা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভিজিয়ে নিন।
- হাতের তালুতে অল্প পরিমাণ ফেসওয়াশ নিয়ে ফেনা তৈরি করুন।
- মুখে আলতোভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন, বিশেষ করে T-zone অর্থাৎ নাক, কপাল, চিবুক এই এরিয়া গুলোতে যেখানে তেল বেশি জমে।
- এরপর ঠাণ্ডা বা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- একটি নরম তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
দিনে ২ বার সকাল ও রাতে ফেসওয়াশ ব্যবহার করা আদর্শ। অতিরিক্ত মুখ ধোয়া উচিত নয়। এতে স্কিন ব্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বয়সভেদে ফেসওয়াশ নির্বাচন:
কিশোর-কিশোরীদের জন্য: ব্রণপ্রবণ ত্বক বেশি দেখা যায়, তাই স্যালিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত হালকা ফেসওয়াশ ভালো।
২০-৩০ বছর বয়সে: তৈলাক্ততা কমানোর পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখা জরুরি।
৩০-এর পর: অয়েল কন্ট্রোলের পাশাপাশি অ্যান্টি-এজিং উপাদান যুক্ত ফেসওয়াশ চিন্তা করা যায়।
কিছু ঘরোয়া বিকল্প ফেসওয়াশ
আপনি চাইলে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে নিজেই তৈরি করতে পারেন ফেসওয়াশ, যা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ও নিরাপদ।
১. বেসনের ফেসওয়াশ:
বেসন ১ চা চামচ, ১ চামচ টক দই, গোলাপজল মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করুন। এটি তেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং ত্বক পরিষ্কার রাখে।
২. মুলতানি মাটি ও লেবুর রস:
ত্বকের গভীর পরিষ্কারে মুলতানি মাটি চমৎকার কাজ করে। লেবুর রস অতিরিক্ত তেল প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে ব্রণ থাকলে লেবুর রস এভয়েড করেতে হবে।
৩. অ্যালোভেরা ও টি ট্রি অয়েল:
অ্যালোভেরা জেল ও দুই ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক সতেজ থাকে এবং ব্রণ কমে।
ফেসওয়াশ ব্যবহারে কিছু সতর্কতা
- অতিরিক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করবেন না, এতে ত্বকের প্রাকৃতিক তেলও নষ্ট হয়ে যায়।
- স্ক্রাব বা এক্সফোলিয়েটিং ফেসওয়াশ প্রতিদিন ব্যবহার করবেন না, সপ্তাহে ২ বার যথেষ্ট।
- অ্যালকোহলযুক্ত ফেসওয়াশ পরিহার করুন, কারণ তা ত্বক রুক্ষ করে দিতে পারে।
- ফেসওয়াশের পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে সঠিক ফেসওয়াশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু মুখ ধোয়ার জন্য নয়, বরং ত্বকের স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। উপযুক্ত উপাদান সমৃদ্ধ একটি ভালো ফেসওয়াশ ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ব্রণ কমায় এবং ত্বককে সুন্দর রাখে।
বাজারে নানা রকম ব্র্যান্ড পাওয়া যায়, তবে আপনার ত্বকের ধরন ও সংবেদনশীলতা অনুযায়ী বেছে নেওয়াই শ্রেয়। এর সাথে প্রাকৃতিক উপাদানের দিকেও মনোযোগ দিলে ত্বকের ওপর অতিরিক্ত চাপ না দিয়েই দীর্ঘমেয়াদে ফল পাওয়া সম্ভব।




