Free Delivery on Makeup & Skin care purchases above 1500BDT
Store Locator
| by Alpona Akhter Sraboni

উজ্জ্বল ও তারুণ্যদীপ্ত ত্বক পেতে সি সিরাম

বর্তমানে রূপচর্চার জগতে ‘সি সিরাম’ সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা একে ত্বকের জন্য ‘সুপারফুড’ বা জাদুকরী খাবার বলে থাকেন। আপনি যদি নিস্তেজ ত্বক, কালচে দাগ কিংবা বয়সের ছাপ নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে আপনার স্কিনকেয়ার রুটিনে আজই যুক্ত করুন ভিটামিন সি সিরাম। এটি আপনার ত্বকের চেহারা আমূল বদলে দিতে পারে।

ভিটামিন সি কী?

সহজ কথায়, ভিটামিন সি হলো এক ধরণের অ্যাসিড। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘অ্যাসকরবিক অ্যাসিড’। আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য এটি অপরিহার্য। তবে ত্বকের যত্নে এটি একটি শক্তিশালী পাহারাদার বা ‘অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট’ হিসেবে কাজ করে।

কীভাবে কাজ করে?

আমাদের চারপাশে প্রচুর ধুলোবালি ও দূষণ রয়েছে। এছাড়া সূর্যের কড়া রোদও ত্বকের ক্ষতি করে। এসব কারণে ত্বকে এক ধরণের বিষাক্ত কণা তৈরি হয়। এই কণাগুলোকে বলা হয় ‘ফ্রি র‌্যাডিক্যাল’। এই ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলো ত্বকের কোষ ধ্বংস করে ফেলে। ফলে অল্প বয়সেই ত্বক বুড়িয়ে যায়। ভিটামিন সি ঢালের মতো কাজ করে। এটি এই ক্ষতিকর কণাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ত্বককে সুরক্ষা দেয়।

সি সিরামের জাদুকরী উপকারিতা

গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ভিটামিন সি ব্যবহার করলে ত্বকে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন আসে। কী ধরনের উপকার হতে পারে, সেসব জেনে নিন।

ত্বক উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত করে: অনেকের ত্বক কালচে বা মলিন দেখায়। ভিটামিন সি ত্বকের এই ক্লান্ত ভাব দূর করে। এটি ত্বকের ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা বের করে আনে। ফলে চেহারা সতেজ ও প্রাণবন্ত দেখায়।

নাছোড়বান্দা দাগ দূর করে: মুখে ব্রণের দাগ, মেছতা বা রোদে পোড়া কালচে ছোপ থাকলে তা সহজে যেতে চায় না। ভিটামিন সি ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ফলে নিয়মিত ব্যবহারে এই জেদি দাগগুলো হালকা হতে শুরু করে।

ত্বক টানটান রাখে (অ্যান্টি-এজিং): বয়স বাড়লে চামড়া ঝুলে পড়ে। এর কারণ হলো শরীরে ‘কোলাজেন’ কমে যাওয়া। ভিটামিন সি শরীরে কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে। এতে ত্বক টানটান থাকে এবং বয়সের ছাপ পড়ে না।

রোদের ক্ষতি থেকে বাঁচায়: ভিটামিন সি সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। আপনি যখন সানস্ক্রিনের নিচে ভিটামিন সি ব্যবহার করবেন, তখন আপনার ত্বক রোদের বিরুদ্ধে দ্বিগুণ সুরক্ষা পাবে।

বলিরেখা কমায়: হাসলে বা কথা বললে অনেকের মুখে ভাঁজ পড়ে। একেই বলিরেখা বলে। ভিটামিন সি নিয়মিত মাখলে ত্বকের এই সূ² রেখাগুলো মিলিয়ে যায়। ত্বক দেখায় মসৃণ ও তরুণ।

ক্ষত সারাতে জাদুকরী: ত্বকে ছোটখাটো কাটাছেঁড়া বা ব্রণের ক্ষত থাকলে ভিটামিন সি তা দ্রæত সারাতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের কোষ মেরামত করে নতুন চামড়া গজাতে সাহায্য করে।

লালচে ভাব ও জ্বালাপোড়া কমায়: অনেকের ত্বক খুব সংবেদনশীল হয়। একটুতেই লাল হয়ে যায় বা জ্বালাপোড়া করে। ভিটামিন সি-এর প্রদাহবিরোধী গুণ রয়েছে। এটি ত্বকের জ্বালাপোড়া কমিয়ে ঠান্ডা ভাব এনে দেয়।

চোখের নিচের কালি দূর করে: চোখের নিচে কালো দাগ বা ফোলা ভাব থাকলে চেহারা ক্লান্ত দেখায়। ভিটামিন সি এই অংশের ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং ফোলা ভাব কমিয়ে দেয়।

ত্বককে আর্দ্র রাখে: অধিকাংশ ভালো মানের ভিটামিন সি সিরামে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড থাকে। এটি বাতাস থেকে পানি শুষে ত্বককে দীর্ঘক্ষণ আর্দ্র ও নরম রাখে। ফলে ত্বক খসখসে হয় না।

ত্বকের সুরক্ষা দেয়াল মজবুত করে: আমাদের ত্বকের একটি নিজস্ব সুরক্ষা স্তর বা ‘স্কিন ব্যারিয়ার’ থাকে। ভিটামিন সি এই দেয়ালটিকে মজবুত করে। ফলে বাইরের জীবাণু বা দূষণ সহজে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে না।

সঠিক সি সিরাম চিনবেন কীভাবে?

দোকানে বা অনলাইনে হাজারো পণ্য পাওয়া যায়। সব সিরাম কিন্তু ভালো নয়। সঠিক সিরামটি চিনতে প্যাকেটের গায়ে যেসব বিষয়গুলো খেয়াল করবেন।

উপাদান: প্যাকেটের গায়ে দেখুন ‘এল-অ্যাসকরবিক অ্যাসিড’ লেখা আছে কি না। এটি সবচেয়ে কার্যকরী ভিটামিন সি।

ঘনত্ব: ১০% থেকে ২০% ঘনত্বের সিরাম ত্বকের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। ১০%-এর কম হলে কাজ কম করে, আবার ২০%-এর বেশি হলে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে।

বোতলের ধরন: ভিটামিন সি আলো ও বাতাস পেলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই অবশ্যই কালচে রঙের বা অস্বচ্ছ কাচের বোতলে থাকা সিরাম কিনবেন। স্বচ্ছ বোতলের সিরাম কিনবেন না।

পিএইচ লেভেল: সিরামের পিএইচ লেভেল ৩.৫-এর নিচে হলে ভালো। এটি ত্বকের গভীরে সহজে ঢুকতে পারে।

মিশ্রণ: ভিটামিন সি-এর সাথে ভিটামিন ই এবং ফেরুলিক অ্যাসিড থাকলে সেটি সেরা ফলাফল দেয়।

ব্যবহারের সঠিক নিয়ম

ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহারের সেরা সময় হলো সকালবেলা। তবে সঠিক ধাপ মেনে ব্যবহার না করলে উপকার পাওয়া যাবে না।

ধাপ ১: প্রথমে একটি ভালো ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছে নিন। পরিষ্কার ত্বকে সিরাম খুব দ্রæত কাজ করে।

ধাপ ২: আপনি চাইলে একটি টোনার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখে। টোনার শুকিয়ে গেলে পরের ধাপে যান।

ধাপ ৩: হাতের তালুতে ২ থেকে ৩ ফোঁটা সিরাম নিন। এবার আঙুলের ডগা দিয়ে মুখে ও গলায় ফোঁটা ফোঁটা করে লাগান। এরপর আলতো করে চেপে চেপে (ট্যাপ করে) মিশিয়ে নিন। খুব জোরে ঘষবেন না।

ধাপ ৪: সিরাম লাগানোর পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন যাতে এটি ত্বকে শুষে নেয়। এরপর আপনার পছন্দের ময়েশ্চারাইজার লাগান। এটি সিরামকে ত্বকের ভেতরে লক করে রাখতে সাহায্য করে।

ধাপ ৫: দিনের বেলা ভিটামিন সি ব্যবহার করলে শেষে অবশ্যই সানস্ক্রিন মাখতে হবে। কমপক্ষে এসপিএফ৩০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এটি ছাড়া ভিটামিন সি-এর সুফল পাওয়া কঠিন।

সতর্কতা ও জরুরি পরামর্শ

ভিটামিন সি খুব উপকারী হলেও ব্যবহারে কিছু সাবধানতা মানতে হয়।

প্যাচ টেস্ট করুন: প্রথমবার ব্যবহারের আগে কানের পেছনে বা হাতের কবজিতে একটু লাগিয়ে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। যদি চুলকানি বা লাল না হয়, তবে মুখে ব্যবহার করুন।

ধীরে ধীরে শুরু করুন: প্রথম দিকেই প্রতিদিন ব্যবহার করবেন না। শুরুতে সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করুন। ত্বক অভ্যস্ত হয়ে গেলে প্রতিদিন সকালে ব্যবহার করতে পারেন।

অন্য উপাদানের সাথে মেশাবেন না: ভিটামিন সি-এর সাথে একই সময়ে ‘রেটিনল’ ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে সকালে ভিটামিন সি এবং রাতে রেটিনল ব্যবহার করুন।

সিরাম নষ্ট হলে বুঝবেন কীভাবে: সিরামের রঙ যদি স্বচ্ছ বা হালকা হলুদ থাকে তবে তা ঠিক আছে। কিন্তু যদি দেখেন রঙ গাঢ় বাদামী বা কমলা হয়ে গেছে, তবে বুঝবেন সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট সিরাম ত্বকে ব্যবহার করবেন না।

শিশুদের জন্য নয়: এই উপাদানটি শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। শিশুদের কোমল ত্বকে এটি ব্যবহার করা যাবে না।

ধৈর্য ধরুন: জাদু বা ম্যাজিকের মতো ১-২ দিনেই ফল পাবেন না। চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন আসতে সাধারণত ৩ মাস সময় লাগতে পারে। তাই ধৈর্য ধরে নিয়মিত ব্যবহার চালিয়ে যান।

সুন্দর ও দাগহীন ত্বক পেতে ভিটামিন সি সিরাম সত্যিই এক চমৎকার সমাধান। এটি কেবল বাইরের সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং ত্বকের স্বাস্থ্যও রক্ষা করে। সঠিক নিয়মে নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনিও ফিরে পেতে পারেন আপনার হারানো লাবণ্য।

 

তথ্যসূত্র: হেলথ ডট হার্ভার্ড ডট এডু, গার্নিয়ার ডট ইন, সিম্পল ডট কো ডট ইউকে, লরিয়াল প্যারিস ইউএসএ ডট কম

 

Sharing is caring

Relevant Products