শীতকালে খুশকি(dandruff) খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। খুশকি থেকে রক্ষা করতে আমরা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু (Anti-andruff shampoo) ব্যবহার করে থাকি। খুশকি হালকা হোক বা জেদি, মূল বিষয় হলো স্ক্যাল্প আসলে কি চাইছে তা বুঝতে পারা। বাজারে মৃদু ফর্মুলা থেকে শুরু করে শক্তিশালী মেডিকেটেড শ্যাম্পু সবই আছে।
এত শ্যাম্পুর ভিড়ে সঠিক শ্যাম্পু বাছাই করাটাও যেন চ্যালেঞ্জ। সঠিক শ্যাম্পু বাছায়ের জন্য স্ক্যাল্প ও চুলের ধরন বোঝা জরুরি।
খুশকি কেন হয়?
শ্যাম্পু কেনার আগে আপনি আসলে কোন সমস্যার মুখোমুখি তা জানা দরকার। খুশকি মূলত একটি সঙ্গে যে আপনার স্ক্যাল্পে কিছু একটা ঠিক নেই। সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো Malassezia নামের এক ধরনের ইস্ট, যা সবার স্ক্যাল্পেপেই থাকে কিন্তু কখনো কখনো অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে জ্বালাপোড়া খুশকি তৈরি করে।
স্ক্যাল্পের ধরনও খুশকির ধরনের উপর প্রভাব ফেলে। কারও স্ক্যাল্প শুষ্ক থাকে, টান লাগে এবং ছোট, পাতলা, শুকনো ফ্লেক (flake) তৈরি হয়। আবার কারও স্ক্যাল্প খুব তেলতেলে হয়। যেখানে হলদেটে, আঠালো ধরনের বড় ফ্লেক তৈরি হয়। অনেকের আবার আবহাওয়া, মানসিক চাপ বা ব্যবহৃত হেয়ার প্রোডাক্ট (hair product) এর কারণে হঠাৎ খুশকি বেড়ে যেতে পারে।
স্ক্যাল্পের যেসব সমস্যায় খুশকি হতে পারে
সেবোরিক ডার্মাটাইটিস (Seborrheic dermatitis): সাধারণ খুশকির তুলনায় এটি আরও তীব্র একটি অবস্থা। যেখানে লালচে ভাব বা ও জ্বালাভাব দেখা দিতে পারে।
কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস (Contact dermatitis): চুলের যত্নে ব্যবহার করা পণ্যের উপাদান থেকে সৃষ্ট অ্যালার্জি বা প্রতিক্রিয়ার ফলে এই সমস্যা হয়।
সোরিয়াসিস (Psoriasis): এটাই সাধারণ খুশকি থেকে আলাদা। এটি স্ক্যাল্পে মোটা ও রুপালি আবরণ তৈরি করে।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন (Fungal infections): এটা খুবই কম দেখা যায়। তবে জেদি খুশকির কারণ হতে পারে।
অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু (Anti-dandruff shampoo) কি?
সাধারণ শ্যাম্পুর তুলনায় অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পুতে কিছু বিশেষ সক্রিয় উপাদান থাকে। যা খুশকির মূল কারণগুলো, যেমন- ছত্রাকের বৃদ্ধি অতিরিক্ত তেল উৎপাদন এবং স্ক্যাল্পের প্রদাহ দমন করতে সহায়তা করে। এ ধরনের শ্যাম্পুগুলো খুশকির জন্য দায়ী উপাদান গুলোকে লক্ষ্য করে কাজ করে। যার ফলে স্ক্যাল্প আরও স্বাস্থ্যকর হয় এবং দৃশ্যমান খুশকি কমে আসে।
অ্যান্টি ড্যানড্রাফ (Anti-dandruff) শ্যাম্পুর উপাদান
এই ধরনের শ্যাম্পুগুলোর মধ্যে কিছু আছে যেগুলো দৈনন্দিন ব্যবহারের উপযোগী, আবার কিছু জেদি খুশকির জন্য শক্তিশালী উপাদানে তৈরি।
জিঙ্ক পাইরিথিওন (Zinc pyrithione): এই ধরনের শ্যাম্পুতে সবচেয়ে পরিচিত একটি উপাদান হলো zinc pyrithione যা pyrithione zinc বা ZPT নামেও পরিচিত। এটি জিঙ্ক সমৃদ্ধ একটি সমন্বিত যৌগ যার অ্যান্টিফাঙ্গাল (Antifungal), অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল (Antibacterial), অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (Antimicrobial) বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা খুশকি এবং সেবোরিক ডার্মাটাইটিস (Seborrheic dermatitis) এর মতো স্ক্যাল্প (Scalp) সমস্যায় ব্যবহৃত হয়।
কেটোকোনাজল (Ketoconazole): জেদি খুশকি ও সেবোরিক ডারমাটাইসিস এর জন্য শক্তিশালী ভাবে কাজ করে।
সেলেনিয়াম সালফাইড (Selenium sulfide): ফ্লেক (Flake) তৈরি কমায় ও ইস্ট নিয়ন্ত্রণ করে।
স্যালিসাইলি অ্যাসিড (Salicylic acid): এটি জমে থাকা ফ্লেক ভেঙে ফেলে ও বিল্ডআপ কমায়।
কয়লা টার (Coal tar): এটি অতিরিক্ত খুশকি দূর করতে ব্যবহার করা হয়।
প্রাকৃতিক খুশকিনাশক উপাদান: টি ট্রি অয়েল, হেম্প অয়েল, নীম।
চুল ও স্ক্যাল্পের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু বাছাই
সব ধরনের শ্যাম্পুতেই ZPT ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত চুলের ধরন অনুযায়ী কাজ করে না বরং এটি খুশকির উৎস কে লক্ষ্য করে কাজ করে। তাই শুষ্ক এবং তৈলাক্ত দুই ধরনের চুলের জন্যই এটি ভালো। তবে ZPT একই থাকলেও শুষ্ক চুল এবং তৈলাক্ত চুলের জন্য কোনটি বেশি উপযোগী সেটা নির্ভর করে পণ্যের ফর্মুলেশনের ওপর।
তৈলাক্ত চুলের জন্য যে ZPT পণ্যগুলো তৈরি হয় সেগুলো সাধারণত হালকা এবং বেশি পরিষ্কার করার ক্ষমতাসম্পন্ন হয়। যা স্ক্যাল্প (scalp) থেকে অতিরিক্ত তেল এবং জমে থাকা ময়লা দূর করে। এসব শ্যাম্পুতে সাধারণত স্যালিসাইলিক এসিড থাকে।
অন্যদিকে, শুষ্ক চুলের জন্য ZPT যুক্ত পণ্যগুলো সাধারণত ময়েশ্চারাইজিং এবং পুষ্টিদায়ক হয়। এসব শ্যাম্পুতে শুষ্ক স্ক্যাল্পের উপযোগী আরগান অয়েল (Argan oil), শিয়া বাটার (Shea butter), গ্লিসারিন (Glycerin), অ্যালোভেরা (Aloe vera), হায়ালুরোনিক অ্যাসিড (Hyaluronic acid), প্যানথেনল (Panthenol) এবং সিরামাইডের মতো হাইড্রেটিং (Hydrating) ও স্ক্যাল্প নরমালাইজিং (Scalp normalizing) উপাদান থাকে।
শ্যাম্পু ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি
প্রথমে চুল ভালোভাবে ভিজিয়ে নিয়ে হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ও স্ক্যাল্প পুরোপুরি ভিজিয়ে নেয়া জরুরি। এরপর হাতের তালুতে অল্প পরিমাণ শ্যাম্পু নিয়ে তা স্ক্যাল্পে (scalp) ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে।
খুশকি (dandruff) স্ক্যাল্পে তৈরি হয় তাই স্ক্যাল্পে শ্যাম্পু লাগানোর গুরুত্বপূর্ণ চুলে নয়।
শ্যাম্পু লাগানোর পর ৩-৫ মিনিট রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে চুল ও স্ক্যাল্প ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে, যেন শ্যাম্পুর কোন অংশ অবশিষ্ট না থাকে। শ্যাম্পুর নির্দেশনায় যদি দ্বিতীয়বার ব্যবহার করার কথা বলা থাকে তাহলে একই প্রক্রিয়ায় আবার ব্যবহার করতে হবে।
অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু (Anti-dandruff shampoo) কি প্রতিদিন ব্যবহার করা যায়?
এ ধরনের শ্যাম্পু প্রতিদিন ব্যবহার না করাই ভালো। এতে শুষ্ক (dry) হয়ে যেতে পারে তাই নির্ধারিত ব্যবহার মাত্রা মেনে চলুন। যেহেতু শ্যাম্পু কিছুটা শুষ্কতা তৈরি করতে পারে তাই একটি কোমল কন্ডিশনার (conditioner) ব্যবহার করতে পারেন।
সবশেষে বলা যায়, খুশকি (dandruff) দূর করতে সবচেয়ে জরুরি হলো স্ক্যাল্পের ধরন বুঝে সঠিক অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু (Anti-dandruff shampoo) শ্যাম্পু বাছাই করা।
সঠিক শ্যাম্পু বাছাই করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি নিয়মিত ও সচেতন ভাবে ব্যবহার করাও জরুরি।
নিয়মিত ও সঠিকভাবে অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু (Anti-dandruff shampoo) ব্যবহার করলে শুধু খুশকি কমে না স্ক্যাল্প (scalp) ও হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক।




